পৃথিবীতে ৫৬ প্রজাতির ধনেশ রয়েছে। আমাদের দেশে তার মধ্যে চার প্রজাতির ধনেশ মুক্ত বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। বনাঞ্চল ধ্বংশ করার কারনে এই পাখি এখন আমাদের দেশে বিরল। রাজধনেশ আমাদের দেশের চট্টগ্রামের গভীর বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। আর সম্প্রতি একবার পঞ্চগড়ে দেখা মিলেছে দেশি মেটে ধনেশের
পাখিটির নাম ধনেশ, ইংরেজীতে বলে Pied Hornbill. এই পাখির মূল বৈশিষ্ট্য হলো শিং এর মত বাঁকানো ঠোট যা খুবই শক্ত। এই ঠোট দিয়ে এরা উঁচু গাছের ডালে খোড়ল করে বাসা বানায়। ফলমূল, পোকামাড়, কীটপতঙ্গ এদের প্রধান খাবার। পৃথিবীতে ৫৬ প্রজাতির ধনেশ রয়েছে। আমাদের দেশে তার মধ্যে চার প্রজাতির ধনেশ মুক্ত বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। সাধারণত আমাদের দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বনাঞ্চলে এই পাখির আবাস।
বাংলাদেশের ধনেশ পাখিগুলো হলো- ১. উদয়ী পাকড়া ধনেশ, ২. রাজ ধনেশ, ৩. পাতাঠুঁটি ধনেশ এবং ৪. দেশি মেটে ধনেশ।
পাতাঠুঁটি ধনেশ শেষ দেখা গিয়েছিলো চট্টগ্রাম বিভাগে, একবার সিলেট বিভাগেও দেখা গিয়েছে। বনাঞ্চল ধ্বংশ করার কারনে এই পাখি এখন আমাদের দেশে বিরল। রাজধনেশ আমাদের দেশের চট্টগ্রামের গভীর বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। আর সম্প্রতি একবার পঞ্চগড়ে দেখা মিলেছে দেশি মেটে ধনেশের। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এবং সহজে দেখা মেলে উদয়ী পাকড়া ধনেশের, এদের গায়ের রঙ সাদা কালো। ছবিতে আমরা পাকড়া ধনেশ দেখতে পাচ্ছি। ছবিটি তোলা হয়েছে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানায় অবস্থিত সাতছরি জাতীয় উদ্যান থেকে। এবার ধনেশ পাখির জীবনের একটি গল্প শুনবো- প্রজনন ঋতুতে স্ত্রী পাখিটি একটি উঁচু গাছের শক্ত ডালে খোড়ল করে বাসা বানায়, অনেক সময় পুরুষ পাখিটিও বাসা তৈরিতে স্ত্রী পাখিটিকে সাহায্য করে।
ডিম পারার আগে পুরুষ পাখিটি কাঁদামাটি, বিষ্টা দিয়ে খোড়লটির মুখ বন্ধ করে দেয়, শুধুমাত্র একটি ছোট ফুটো রাখা হয় স্ত্রী পাখিটির খাবার সরবরাহ করার জন্য। স্ত্রী পাখিটি খাবারের জন্য প্রজননকালীন সময়ে সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে পুরুষ পাখিটির উপর। বাসা তৈরি হয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যেই স্ত্রী পাখিটি ডিম পারে (২টি থেকে সর্বোচ্চ ৬টি)। ডিম পারার সাথে সাথেই স্ত্রী পাখিটির শরীরের সমস্ত পালক ঝরে পড়ে। সর্বোচ্চ তিনমাস সময় স্ত্রী পাখিটি এই বদ্ধ ঘরে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে থাকে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার পর পর আবার স্ত্রী পাখিটির শরীরে পালক গঁজাতে শুরু করে। এই তিন মাস একনিষ্ঠ ভাবে বাচ্চা এবং স্ত্রীর খাবার জোটাতে ব্যস্ত থাকে পুরুষ পাখিটি। এই সময়ে কোন কারনে যদি খাবার সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয় তাহলে খোড়লের ভেতরেই মারা পরে বাচ্চা সহ মা পাখিটি। খাবারের সরবরাহে কীভাবে সমস্যা তৈরি হয়? প্রশ্ন জাগে মনে?
সমস্যা তৈরি করে ফেলি আমরা, এই মানুষেরা। কী অবাক লাগছে? হ্যা কোন লোভী শিকারী যদি খাবারের সন্ধানে থাকা পুরুষ পাখিটিকে শিকার করে নিজের খাবার বানিয়ে ফেলে তাহলে? কিংবা কোন লোভী মানুষ যদি জংলী ফলের গাছটি কেটে ফেলে যেখান থেকে নিয়মিতভাবে পুরুষ ধনেশটি ফল সংগ্রহ করছিলো তার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের জন্য। আর যদি খাবারের সরবরাহে কোন ঘাটতি না হয় তাহলে তিনমাস পর পুরুষ ধনেশটি তার পুরুষ্ঠ ঠোট দিয়ে খোড়লের সেই মাটির আস্তরন সরিয়ে ফেলে এবং বের করে আনে তার স্ত্রী ও তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে!
আমরা ধনেশ পাখির শিকার বন্ধ এবং এর আবাসস্থল নষ্ট না করলেই কেবল এই পাখির সংখ্যা বাড়বে।
লেখা ও ছবি : আব্দুল ফাত্তাহ।
আপনার মতামত লিখুন :