বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ গ্রহণের পর বারো দিন পার হলেও এখনও টাকার অপেক্ষায় দিন গুণছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। সবল ব্যাংক থেকে টাকা ধার পেতে তাদের আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া টাকার নিশ্চয়তা ধারদাতা প্রতিষ্ঠান কোন পদ্ধতিতে পাবে সেটি গতকাল পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ-কালের মধ্যে এটি ঠিক হলে যেসব ব্যাংক টাকা ধার দেবে তারা তাদের পরিচালনা পর্ষদে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রস্তাব পাঠাবে। পর্ষদ অনুমোদন করলেই এই প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা ধার পাবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সবল ব্যাংকে টাকা ধার চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া দুর্বল না হলেও নগদ টাকার সংকটে পড়ে কয়েকটি ব্যাংকে টাকা ধার চেয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
দুর্বল ব্যাংকগুলোর টাকা ধার পেতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা নতুন সংবাদকে বলেন, ‘ধারদাতা ব্যাংকগুলো কিভাবে তাদের টাকার নিশ্চয়তা পাবে সেই পদ্ধতি ঠিক করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য যে ‘নিশ্চয়তাপত্র’ তৈরি করা হয়েছিল সেখানে একটি বেসরকারি ব্যাংক সংশোধনী চেয়েছে। তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আজকালের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর টাকা পেতে আর সময় লাগবে না।’
ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেওয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন নতুন সংবাদকে বলেন, ‘বড় ব্যাংক হিসেবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকেই টাকা ধার দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে ইসলামী ব্যাংকসহ ন্যাশনাল, ইউসিবি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও ইউনিয়ন ব্যাংক টাকা ধার চেয়েছে। তাদেরকে ধার দেওয়ার বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যে গ্যারান্টি পেপার তৈরি করেছিল সেখানে আমরা একটি সংশোধনী দিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের টাকার নিশ্চয়তা কিভাবে দিবে, আশাকরি দুই-এক দিনের মধ্যে একটি পরিষ্কার চিত্র পেয়ে যাবো। এরপরই আমরা আমাদের পর্ষদে প্রস্তাব পাঠাবো। পর্ষদ অনুমোদন দিলেই ব্যাংকগুলো টাকা পেয়ে যাবে।’
জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় সীমাহীন ঋণ জালিয়াতির কারণে এই ব্যাংকগুলো নগদ অর্থের তীব্র সংকটে পড়ে। কিন্তু টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংককে সচল রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নতুন সরকার দায়িত্বে আসার পর এই ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে সরবরাহ করা বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নিয়মিত লেনদেন চালাতে পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়ে পাঁচ ব্যাংক। এই পরিস্থিতিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সমস্যা-আক্রান্ত ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দিতে অন্য ব্যাংকগুলোকে অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২২ সেপ্টেম্বর এই ধারকৃত অর্থের জামিনদার হতে পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে অন্য ব্যাংকগুলো নির্ভয়ে টাকা ধার দেয়। তাতেও সমস্যার সমাধান হয় না। এই ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়। অবস্থা আরও বেগতিক হলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সবল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠকে বসেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি এমডিদের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান পরিস্কার করেন এবং পাঁচ ব্যাংকের কেউ টাকা ফেরত দিতে ব্যার্থ হলে তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। এই প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো টাকা ধার দিতে সম্মতি প্রকাশ করে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিশ্চয়তাপত্রের অপেক্ষায় রয়েছে ব্যাংকগুলো। নিশ্চয়তাপত্র তৈরি হয়ে গেলেই টাকা ধার পেতে আর বাধা থাকবে না দুর্বল ব্যাংকগুলোর সামনে।
আপনার মতামত লিখুন :