চলতি বছরের ৯ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরের ২৩ দিনেই ডেঙ্গুতে রেকর্ড মৃত্যু দেখল বাংলাদেশ। এ সময় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩০০ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৯০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু ও ২৮৬৫ জন আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীও এর মধ্যে রয়েছে।
বিপজ্জনক তথ্য হলো, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে এ বছরের ন্যায় এত বড় মৃত্যুর মিছিল ছিল না। চলতি বছরের মধ্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সময়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান শুধু ঊর্ধ্বমুখীই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর ২৩ বছরের রেকর্ডও ভেঙেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এবার ধারণা করা হচ্ছিল জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাস বর্ষার মৌসুম হওয়ায় এ সময়টায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা চূড়ায় ঠেকবে। এরপর ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে আসবে পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞরা তখন এমন আভাসই দিয়েছিলেন। কিন্তু না। পরিস্থিতির কোনো ভালো লক্ষণ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৮৬৫ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮১৪ জন। ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৫১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ছয়জন এবং ঢাকার বাইরের আটজন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৮ হাজার ১০৩ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৬১৪ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সঠিকভাবে না হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এই চেষ্টা নিয়মিত চললেও সফলতা দেখতে অন্তত আরও এক বছর লাগবে। আর ডেঙ্গুতে ধারাবাহিক মৃত্যু বাড়ার কারণ এখনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার হয়নি। এখনো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণ, ল্যাবরেটরি টেস্ট, ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের মাধ্যমিক স্তরের হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থাও হয়নি। রোগী বাড়তে থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যাও এই হারে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। রোগী কমলে মৃত্যু কমবে। তিনি আরও বলেন, এই ধারা কতদিন চলবে তা রোগতত্ত্ববিদরা একা বলতে পারবেন না, আবহাওয়াবিদদের পরামর্শ লাগবে। আবহাওয়াবিদরা বৃষ্টিপাতের বিষয় বলতে পারবেন। কারণ মশা বংশবিস্তারের সঙ্গে বৃষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হলে আগামী মাসেও মশার প্রকোপ থাকবে। তখন ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছরের জুন থেকে প্রতিদিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। মাসের হিসাবে জুনে যেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫ হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন এবং জুন ৫ হাজার ৯৫৬ জন।
এদিকে, আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর মিছিলও একইভাবে বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। জুলাইয়ে মৃত্যুর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৪ জনে। জুলাইয়ের রেকর্ডও ভেঙে যায় আগস্টে। এ মাসে মারা যান ৩৪২ জন। আগস্টের মৃত্যুর পরিসংখ্যানও অতীতের যে কোনো সময়ের মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায়। বছরের প্রথম ভাগে জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ২ জন ও মে মাসে ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ###
আপনার মতামত লিখুন :