ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হাসিনার বিরুদ্ধে সাতটি হত্যা মামলা

দৈনিক নতুন সংবাদ | খান শান্ত , ঢাকা : আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম হাসিনার বিরুদ্ধে সাতটি হত্যা মামলা
ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভুত্থানে দেশছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৬ দিনে দেশের বিভিন্নস্থানে ৭টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া অপহরণের একটি মামলায়ও আসামী হয়েছেন তিনি। এসব মামলায় শেখ হাসিনার দোসর সাবেক একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও আসামী হয়েছেন। 
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কাফরুল, শেরেবাংলা নগর, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া সদর ও বন্দর নগরী চট্রগ্রামের চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলাগুলো দায়ের করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের পরিবারের সদস্যরা এসব মামলার বাদী। 

আন্দোলনে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার (১৮) গুলিতে নিহতের ঘটনায় আজ রোববার নিহত নজিবুল সরকারের বাবা মজিদুল সরকার বাদী হয়ে জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনকে। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। 

৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নজিবুল সরকার নিহত হন। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের মজিদুল সরকারের ছেলে। নজিবুল সরকার পাঁচবিবি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবু সায়েদ নামের এক মুদিদোকানিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য গত ১৩ আগস্ট নির্দেশ দেয় আদালত। মামলাটিতে আসামি হিসেবে অন্য যে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। 
গত ১৪ আগষ্ট ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলামের ভাই রাজীব শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। পরে মামলাটি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আহমদ হুমায়ুন কবির রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। মামলার বাদীর অভিযোগ, গত ১৯ জুলাই হত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচার গুলি চালিয়ে ফয়জুল ইসলামকে মিরপুর-১০ গোলচত্বরসংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে হত্যা করা হয়। সেদিন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শাহাবুদ্দিনকে (৩৫) হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলার আবেদন করেন শাহাবুদ্দিনের বাবা আবুল কালাম। সিএমএম আদালত ১৫ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেন (৩৫) নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত সেলিম হোসেনের বাবা সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় ১৬ আগষ্ট মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় শুক্রবার রাতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো. পারভেজ নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া নয়াপাড়ার নুর আহম্মেদ বাড়ির বাদশা মিয়ার ছেলে। গত ১৮ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাকে হত্যা করা হয়। 
গত ১৪ আগষ্ট সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে উত্তরা পশ্চিম থানাকে নির্দেশ দেয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিল সুমু চৌধুরী। মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা দাবি করেছেন, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে উত্তরা এলাকা থেকে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আটক করা হয়। পরে তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।###

Side banner