Daily Natun Sangbad
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

শ্রমিক ফিরলেও শঙ্কা! 

দৈনিক নতুন সংবাদ | নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:২৪ পিএম শ্রমিক ফিরলেও শঙ্কা! 

শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে অধিকাংশই খুলে দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চল সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও টঙ্গীতে বেশিরভাগ কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। শনিবার সকালে এসব কারখানায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো শ্রমিক অসন্তোষ ও কর্মবিরতির খবর পাওয়া যায়নি। 


তবে বাইরে কোনো বিক্ষোভ না হলেও আশুলিয়ায় কিছু কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ হয়েছে। ফলে ১৭টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গতকাল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে রোববার থেকেই সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা  অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’ এই অবস্থায় তৈরি পোশাক কারখানা ঘিরে এখনও শঙ্কা রয়েই গেছে। বেশিরভাগ শ্রমিক স্বেচ্ছায় কাজে ফিরলেও একটি অতিউৎসাহী শ্রমিক গ্রুপের কর্মকাণ্ডে ভেতরে-ভেতরে সাধারণ শ্রমিকদের মনের শঙ্কা দূর হচ্ছে না।  


এদিকে, সকল প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সেনা ও বিজিবি টহল অব্যাহত রয়েছে সড়কে-মহাসড়কে। শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক সারোয়ার আলম বলেন, শনিবার সকাল থেকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে এবং সকাল ৮টার পর থেকে শুরু হয়েছে উৎপাদন।  তিনি জানান, শনিবার শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ থাকা ৮৬টি কারখানার বন্ধ ৫০টি খুলেছে। আর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া বাকি ১৩৩টি কারখানার মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ কারখানায় খোলা হয়েছে। শুধু ১৩ টি কারখানায় এখনও সাধারণ ছুটি রয়েছে।


এদিকে শনিবার রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে এক মতবিনিময়সভায় রোববার থেকে দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি জানান, ‘কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করে, সেটাও মনে রাখা হবে।’


কিন্তু বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে রবিবার থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা  অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’ বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্তের সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।


বিজিএমইএ আয়োজিত মতবিনিময়সভায় শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রমসংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই, এমনও নয়।’ 


শ্রম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জন্য কোন প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার।’ তবে এই সব প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা করবে, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। 


প্রসঙ্গত, টানা দুই সপ্তা ধরে চাকরিপ্রত্যাশী ও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে বৃহস্পতিবার ২১৯টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। যার মধ্যে ৮৬ টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে শনিবার কিছু কারখানা বাদে অধিকাংশ খোলা রয়েছে, স্বাভাবিক রয়েছে উৎপাদন।


৬ মামলায় আসামি ১৯১০ :
গত কয়েকদিন ধরে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ছয়টি মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ। পাঁচটি মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৯১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হলেও সংখ্যা উল্লেখ নেই।


শনিবার দুপুরে মামলার বিষয়ে নিশ্চিত করেন শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম। এর আগে গত ৫ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আশুলিয়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।


জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর টংগাবাড়ি এলাকার ন্যাচারাল ডেনিমস লিমিটেড কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সবুজ হাওলাদার বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন—বুলেট (২৩), সুজন সরদার (২১), হারুন অর রশিদ (৪২), মো. গাদ্দাফি (২৪) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জন। তারা সবাই ন্যাচারাল ডেনিমস কারখানারই শ্রমিক-কর্মচারী।


এছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার বেরন এলাকার ইয়াগী বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সহকারী ব্যস্থাপক (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলম অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। 
গত ১১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন ইউসুফ মার্কেট এলাকার ডিসাং সোয়েটার লিমিটেড কারখানার ব্যস্থাপক (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন (তপন)। মামলাটিতে আসামিদের সংখ্যা উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।


এ ঘটনার দুই দিন আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু রোড এলাকার আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম মীম অ্যাপারেল্স লিমিটেড ও লাম মীম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপক রেফাই সিদ্দিক। একই দিনে আশুলিয়া থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন জিরাব পুকুরপাড় এলাকার লুসাকা গ্রুপের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহেল রানা। মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ জনকে আসামি করা হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার গৌরিপুর এলাকার ম্যাকসসন্স স্পিনিং মিলস পিএলসি কারখানার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ###
 

Side banner