ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতি

হাসিনার ৫৯ হাজার কোটি!

দৈনিক নতুন সংবাদ | ডেস্ক রিপোর্ট আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০৪:৩৭ এএম হাসিনার ৫৯ হাজার কোটি!

‘গণেশ উল্টো যাওয়ার’ মাত্র দুই সপ্তার মধ্যে একের পর এক হত্যা মামলায় আসামীর তালিকায় স্থান পাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হাসিনার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগেও মামলা হয়েছে। টানা ষোল বছর একচ্ছত্র শাসনকালে কী করেছেন শেখ হাসিনা, সেইসব বিষয় নিয়ে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও সরব রয়েছে। বিশ^াসযোগ্য-অবিশ^াসযোগ্য নানা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ‘থলের বিড়াল’ বের করছে গণম্যাধ্যমগুলো। 


গত শনিবার নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প। তাদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসেব করলে যার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা।


গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘ রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা- রোসাট্রম মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। অর্থ আত্মসাতের পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক।’


নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে পোর্টালটি ২০১৮ সালে চালু হয়। মূলত বিভিন্ন দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির অনুসন্ধান করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।


গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের অবকাঠামে নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা এই প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাত করেছেন। এই টাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দিয়েছে রাশিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম। সংস্থাটির কাছ থেকে সোভিয়েত আমলের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরস ক্রয়ের মাধ্যমে ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 
অবকাঠামো নির্মাণে দুর্নীতি 


প্রতিবেদন মতে, নিউক্লিয়ার পাওয়া প্ল্যান্ট তৈরিরে মতো অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের অতীতে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, ছিল না বিশেষজ্ঞও। তারপরও প্ল্যান্ট তৈরিতে বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে এবং কোনো ধরনের তদারকি ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয় মস্কোর হাতে। 

রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকেল্পর গৃহসজ্জার সামগ্রী ক্রয়ে উচ্চমূল্য নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দুর্নীতির বিষয়টিকে নানামাত্রায় আলোচনায় আনে। এখন সাধারণ মানুষ পুরো প্রজেক্টের ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মতো প্রকল্প সংশ্লিষ্ট শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যা সত্যিই অস্বস্তির। 
বিষয়টি একপর্যায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এ কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, দাপ্তরিক কার্যক্রম, অনুমোদন এবং ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কোনো এখতিয়ার ছিল না। 
এই বিবৃতি আরও একটি প্রশ্নকে সামনে আনে। সেটি হলো, যদি মন্ত্রণালয়কেই তদারকিতে রাখা ন হয় তবে তদারকির দায়িত্বটা আসলে কার। 


শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন


বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারের ব্যাপকমাত্রায় দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণ চুক্তি করতে মধ্যস্থতা করেন। রোসাট্রমের সঙ্গে লন্ডনেই চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বিতর্কিত বিলিয়ন-ডলার অস্ত্রক্রয় সংক্রান্ত চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন টিউলিপ সিদ্দিক। এরই ধারাবাহিকতায় রূপপুর প্রকল্পেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে তিনি কোনো ধরনের স্বার্থ ছাড়াই যে কাজটা করছেন বিষয়টি এমন নয়। এর বিনিময়ে প্রতিমাসে তিনি শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘বিশেষ সম্মানী’ নিয়েছেন। টিউলিপের মা শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে গোপনে পৌঁছে দেওয়া হয় তাদের ভাগের টাকাও।


দুর্নীতির অভিযোগ টিউলিপ সিদ্দিকির পরিবারের বিরুদ্ধেও


টিউলিপের মামা তারিক আহমেদ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। তার স্ত্রী এবং কন্যা একটি ভুয়া কোম্পানি প্রচ্ছায়া লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার। যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের। 
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প বলছে, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থপাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।

 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা দেরি হতে পারে


রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি গেল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা দেরি হতে পারে।


রাশিয়ার সহযোগিতায় পাবনার রূপপুরে নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এটি তৈরি হলে এর দুটি ইউনিট থেকে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।


প্রকল্পটির ৯০ ভাগ অর্থায়ন হচ্ছে রাশিয়ার ঋণে। ১০ ভাগের জোগান দিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটিতে ভিভিইআর প্রযুক্তির তৃতীয় প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার প্রত্যেকটির উৎপাদন সক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট করে। চলতি বছর প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 


গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের প্রথম ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান দেশে আসে। পরে তা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে রাশিয়া। ####

Side banner